শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে নৌকা নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বেশুমার অভিযোগ – বিতর্ক উঠায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি। নৌকা না পেয়ে চরম ক্ষুব্ধ তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিয়েছেন তিনি।
এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কক্সবাজার ১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। তাকে নৌকার মনোয়ন না দিয়ে তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অন্যায় করেছেন দাবি করে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দ্যেশে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রাখেন এমপি জাফর।
জানা গেছে, দলের মনোনয়ন না পেয়ে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রতিক পাওয়ার পর থেকে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটায় পেকুয়ায় নিজের সমর্থনে আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে জাফর আলম দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আমি একবার মনোনয়ন পেয়েছি। কিন্তু আমি শতবার মৃত্যুর মুখে আপনার জন্য গিয়েছি। আমি আপনার জন্য আমার জীবনে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি। আমি কক্সবাজারে এক মিটিনিংএ ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ করেছি। আপনাদেরকে থ্রি স্টার হোটেলে রেখেছি। মাতার বাড়িতে ৪০ হাজার মানুষকে একদিনের খাবার দিয়ে এক হাজার ট্রাক গাড়ি দিয়ে আমি জনসভাকে সফল করেছি। আপনি(শেখ হাসিনা) সেখানে ঘোষণা করলেন আশেক উল্লাহ রফিক এমপি প্রার্থী ।’
হুমকি সরূপ এমপি জাফর প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ শোনেন..!!! নেত্রী, আল্লাহ উপরে। আমি দোষ করলে আল্লাহ আমার বিচার করবে। কিন্তু আমি মনে করেছি এটা আমার প্রতি অবিচার হয়েছে। আমার মতো একজন সহজ সরল কর্মীকে, আমাকে বারবার ঠকিয়ে আরেকজনের কাঁধে নৌকা দিয়ে আমার কাছ থেকে নৌকা কেড়ে নিয়েছিলেন। সেদিনও আমি হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে ভোট দিতে না পেরে নেতাকর্মীরা চোখের জল ফেলে চলে গেছে। সেদিনও আমি আপনার কথা শোনেছি।’
এমপি জাফর আলম বলেন, সুতরাং, এখন আপনি বলেছেন, সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র ভোট করতে পারবেন। আমি স্বতন্ত্র ভোট করতেছি। এখানে যদি আমি কারো কোন ধরনের অশুভ পায়তারা দেখি আমরা চকরিয়ার মানুষ। শহীদ আব্দুল হামিদের চকরিয়া, আবুল কালমের চকরিয়া-পেকুয়া এটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চকরিয়া। এখানে কোন অন্যায় আমরা বরদাস্ত করবো..না, করবো না.., করবো.. না।’
জাফর বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমার চেয়ে নৌকাকে ভালবাসে এমন কে আছে। দিনে নৌকা, রাতে বিএনপি, কার টেলিফোন রিসিভ কর, কার জায়গা দখল কর। সব আমার কাছে খবর আছে। আমাকে পেকুয়ার ভোট দিবেন কি, দিবেন না সেটি আপনাদের ব্যাপার। চাঁদাবাজী, দখলবাজী এগুলা চলবে..না চলবে..না চলবে..না। সোজা কথা।’
নিজের অবস্থান তুলে ধরে জাফর বলেন, ‘এখনো বলছি ইনশাল্লাহ, আল্লাহর যদি রহমত থাকে জাফর জনতা.., জাফর জনতা। আল্লাহর রহমত ছাড়া আমাকে রোখার সাধ্য নাই কারো। আমার মার্কা ট্রাক, কেন ট্রাক নিয়েছি..। নৌকার অবস্থা বেশি খারাপ। নৌকাকে ট্রাকে তুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আবার বলবো, ট্রাক মনে করিয়েন না আপা, এটা নৌকা। টিক আছে। আমি আপনার জাফর। ‘
বক্তব্যে আক্ষেপ করে জাফর আলম আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একদিন বলতেন ‘আমার জাফর’। কেন জানিনা, কোন কালো ইশরায় আমি আপনার পর হয়ে গেলাম।’
এ বিষয়ে জানতে এমপি জাফর আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া দেননি। তবে তার ফেসবুকে এক স্ট্যাডার্সে তিনি লিখেছেন, “গতকাল পেকুয়ায় নির্বাচনী অফিস উদ্বোধনকালে প্রদত্ত একটি বক্তব্যের খন্ডিত অংশ বিশেষ প্রচার করে আমার বক্তব্যকে একটি মহল বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পুরো বক্তব্য শুনলে বুঝা যাবে, আমি সেই বক্তব্যে আবেগতাড়িত হয়ে মমতাময়ী নেত্রীর প্রতি আমার আনুগত্যের কথা তুলি ধরেছি। একই সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের জন্য কাজ করেও মনোনয়ন না পাওয়ার বেদনা উপস্থিত সহযোদ্ধাদের সাথে শেয়ার করি। তাছাড়া যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সয়ং সতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন সেখানে কিছু অতিউৎসাহী ব্যক্তি কর্তৃক আমার সহযোদ্ধাদের উপর অব্যাহত চাপের কথা উল্লেখ করি। কিন্তু একটি চিহ্নিত মহল আমার আবেগ তাড়িত ব্যক্তব্যকে অপব্যাখ্যা করে সংবাদ উপস্থাপন করছে। যা দেখে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই মমতাময়ী নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার একমাত্র রাজনৈতিক অভিভাবক। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা প্রশ্নাতীত। জোট সরকার আমলে দীর্ঘ ২৭ মাসের জেল জুলুমও আমাকে তাঁর আদর্শ থেকে একবিন্দু টলাতে পারেনি। নেত্রীর নিবেদিত প্রাণ কর্মী হিসেবেই আমি এই আবেগ অনুভূতি ব্যক্ত করেছি। একজন ভগ্ন হৃদয়ের রাজনৈতিক কর্মীর আবেগ তাড়িত বক্তব্যকে অপব্যাখ্যা করা খুবই হীনমানসিকতার পরিচায়ক। আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়েই এই অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে মনে করি। একই সাথে এমন অপচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”
প্রসঙ্গত, চকরিয়া পেকুয়ায ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টির অভিযোগ আছে এমপি জাফরের বিরুদ্ধে।তার কথা মতো না চললে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মারধর হুমকি ধমকি ও মামলা হামলার ঘটনা ঘটছে প্রায়সময়।শত শত আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ রয়েছে এ সংসদের বিরুদ্ধে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply